কেবিএম আছমত আলী সরকার

কেবিএম আছমত আলী সরকার ১৯৩৫ সালে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার তৎকালীন গফরগাঁও (বর্তমান ভালুকা ) থানার খিরু নদীর অববাহিকায় অবস্থিত খারুয়ালী গ্রামের সরকার বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা: মরহুম জবান আলী সরকার, মাতা:মরহুমা কলিমুন নেচ্ছা। চার ভাই ৬ বোনের মধ‍্যে তিনি ছিলেন জ‍্যেষ্ঠ।

শিক্ষাজীবনঃ মেটিকুলেশন

সন্তানাদিঃ ৮ ছেলে ও ১ মেয়ের জনক।

রাজনৈতিক জীবন: শৈশব থেকেই রাজনীতি সচেতন আছমত আলী ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের ভীষণ ভক্ত। ছাত্রাবস্থায় আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতি তিনি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। তরুণ বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ ব‍্যক্তিত্বে আকৃষ্ট হয়ে তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগ পরবর্তীকালে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ছাত্রাবস্থায়ই তিনি বিভিন্ন সভাসমাবেশে নেতৃত্ব দিতে থাকেন।

 

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পক্ষে কাজ করেন ।এরপর ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন,১৯৫৮ এর ১৯৬২ র শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ছয়দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণআন্দোলনে (গণঅভ‍্যূত্থান ) যোগ দিয়ে নিজেকে রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় ঋদ্ধ করেন, এবং ভালুকার তারু চেয়ারম্যানের বাড়ী আগুনে পুড়ানোর মিথ্যা মামলার প্রধান আসামী ছিলেন এ কেবিএম আছমত আলী। উক্ত সময় দীর্ঘ ২ বছর তিনি ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৩২ নাম্বার ধানমন্ডি বাড়ীতেই ছিলেন।

১৯৭০এর নির্বাচন ও এর পরবর্তীকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।

মুক্তিযুদ্ধে অবদনঃ ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর অপরাপর আওয়ামীলীগ কর্মীদের মতো তিনিও প্রথমে মুক্তিযোদ্ধাদের সুসংগঠিত করেন।

১৯৭১ সালে তিনি ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার এর অধীনে স্বাধীন বাংলা ফুটবল টিম গঠন করে, ভারতের বিভিন্ন শহরে খেলা প্রর্দশন এর উপার্জিত টাকা বাংলাদেশ সরকারে তহবিলে জমা দিতেন ও মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পগুলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের খোজখবর নিতেন ও সহয়তা করতেন । যার প্রমান অনেক জীবিত মুক্তিযোদ্ধা

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ সহ সকল আন্দোলনে ভালুকা থানা ও ময়মনসিংহ জেলায় আ’লীগের নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত আদরের স্নেহধন্য ব্যক্তি হয়ে উঠেন।

সাংগঠনিক দায়িত্বঃ তিনি ১৯৫৫ সালে ভালুকা থানা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ১৯৬৫ সালে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন।

১৯৭১ সালের ১০ ই মার্চ ভালুকা থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে ভালুকায় এক বিশাল জনসভারমঞ্চে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা ভালুকায় সর্বপ্রথম উত্তোলন করেন কেবিএম আছমত আলী ।

ত্যাগ ও কারাবরণঃ ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে ঘাতকদের হাতে শহীদ হয়েছেন এই খবর শুনে তিনি নির্বাক হয়ে যান।

বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয় সাথে উনার চাচাত বড় ভাই আহাম্মদ আলী সরকার (সাবেক চেয়ারম্যান) কে গ্রেফতার করা হয়। ভালুকায় টর্চারসেল বানিয়ে উনাদের একটানা ২১ দিন পর্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয়।

সে সময় তিনি জেলে থাকা অবস্থায় উনার মা প্রচন্ডভাবে ভেঙ্গে পড়েন এবং মৃত্যুবরণ করেন ।

১৯৪৮ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত আ‘ লীগের দীর্ঘ কঠিন দুঃসময়কালে সকল ঝুঁকি নিজের মাথায় নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ভালুকা থানা আ’লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে বার বার জেল-জুলুম ও সীমাহীন নির্যাতনের শিকার হন। উনার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন এবং ব্যক্তিগত সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা ও মানব সেবার বৈশিষ্ট্যের কারণে ভালুকার লাখ লাখ জনতার যে আস্থা ও বিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে তা সব সময় দৃশ্যমান।

 

উপাধিঃ আছমত আলী জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যান্ত স্নেহধন্য ও আদরের ছিলেন। কে.বি.এম. (খাঁন বাহাদুর মোহাম্মদ) উপাধিটা বঙ্গবন্ধু নিজেই দিয়েছিলেন। তারপর থেকেই তিনি এ এলাকায় কে.বি.এম. আছমত আলী নামে পরিচিতি পান।

 

মৃত্যুঃ ২০০৯ সালের ২৭শে নভেম্বর নিজ বাড়ীতে রাত্র ১২:৩০মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত‍্যাগ করেন এই প্রবীন রাজনৈতিক ব্যক্তি।

সর্বপুরি উনার বিদেহী আত্মার শান্তিকামনা করছি। সর্বশক্তিমান আল্লাহুতালা উনাকে জান্নাতবাসী করেন। আমিন।

বি:দ্র: উপরোক্ত তথ্য উনার পরিবারের সদস্য কেবিএম সাইদুজ্জামান রানা ও কে বি এম রাতুল এর কাছ থেকে সংগৃহীত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top