বন বা উদ্যান যাদের পছন্দের জায়গা তাদের জন্য ভাওয়াল গড় বা মধুপুরের গড়ের বিকল্প হতে পারে ভালুকা উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নে অবস্থিত কাদিগড় জাতীয় উদ্যান।
দীর্ঘ সময় ধরে গড়ে তোলা এই উদ্যানটি ভালুকা উপজেলার ২১ ভাগ জায়গা জুড়ে আছে যা পর্যটকদের দিবে অরণ্যের স্বাদ। কাচিনা ইউনিয়নের সিডস্টোর বাজার থেকে সখিপুর যাওয়ার রাস্তায় পরে কাচিনা বাজার, সেই বাজার হতে প্রায় ১ কি.মি. উত্তরে পালগাঁও চৌরাস্তার পাশেই কাদিগড় জাতীয় উদ্যানের প্রধান প্রবেশপথ।
কাদিগড় বিট ও উথুরা বিট নামকরণ করে কাদিগড় জাতীয় উদ্যানকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কাদিগড় জাতীয় উদ্যানে রয়েছে ১টি প্রবেশপথ, ১টি অফিস ভবন, ২টি ইকো কটেজ, ১টি বিশ্রামাগার, ২টি গোলাঘর, ১টি ওয়াচ টাওয়ার, ২টি সেন্ট্রি পোস্ট, ১টি পিকনিক স্পট এবং ১টি লেক। উদ্যানটি ঘিরে এবং ভেতর দিয়ে মোট ৭শ মিটার পাকা রাস্তা রয়েছে আর রয়েছে ব্রিক সলিং রাস্তা যার দৈর্ঘ্য ১ হাজার মিটার।
চুন, লোহা আর অ্যালুমিনিয়ামের পরিমাণ এই গড়ের মাটিতে বেশি থাকায় মাটির রং লালচে যা মধুপুর গড়ের নিদর্শন হিসাবে প্রকাশ পায়। স্থানীয় মানুষের ভাষায় ‘মাইটাল’ আর ভূ-তাত্ত্বিকদের মতে মধুপুর ক্লে নামে খ্যাত এই কাদিগড়ের মাটি, যার আদি উৎস মুধুপুরের গড়। ক্রান্তিয় পতনশীল ও ঔষধি গুণাগুণ সমৃদ্ধ শাল এবং গজারি গাছ এই বনের রাজা, যা দেয় ভাওয়াল গড়ের রূপের ছায়া; আর রয়েছে মেহগনি গাছের বাগান। বিভিন্ন গুল্মজাতীয় গাছ ও বেত গাছের ছড়াছড়ি পুরো বনাঞ্চল জুড়ে।
উঁচুনিচু মালভূমির মতো মাঠ ও এলাকাগুলো চোখে পরে একটু পরপরই, যা ছোট পাহাড় ও টিলার আমেজ তৈরি করে। আর জীবজন্তুর কথা বলতে গেলে তো হনুমানের কথাই সবার প্রথম আসে, যদিও তা বিপন্ন প্রানীর তালিকায় চলে এসেছে ইতিমধ্যে। এছাড়াও নানান প্রজাতীর পাখপাখালির মাঝে দেশী শুমচার দেখা মিলে এই বনে যা প্রায় বিলুপ্ত একটি পাখি। বানর, ময়ূর, বন মোরগ, বুনো শুকোরসহ অনেক জীব-জন্তুর বসবাস এই বনে।
বনের ভিতরে গড়ে উঠা কাঁঠাল বাগান, মেহগনি বাগান, বুনো আলু, বেত ইত্যাদি বনাঞ্চল এলাকার মানুষের জীবিকার উৎস। কাদিগড় বিটের বিট অফিসার মোঃ ছেফায়েতউল্লার কাছ থেকে জানা যায় যে, এই বনাঞ্চলের বনজ দ্রব্য বিক্রি করে সরকারী কোষাগারে জমা হয় প্রায় অর্ধ কোটি টাকা৷ তবে বনের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে পরিমাণ লোকবল প্রয়োজন তা নেই বলে অবৈধভাবে কেটে নেয়া হচ্ছে মেহগনি ও শালের মতো দামী কাঠের গাছ।
কাদিগড় জাতীয় উদ্যানের কথা এখনও অনেকের অজানা। ভ্রমণ পিয়াসী মানুষগুলোর জন্য এই উদ্যানটি হতে পারে বনের প্রতিরূপ। ময়মনসিংহ সদর হতে এই বনাঞ্চলটি প্রায় এক ঘন্টার পথ, আর ঢাকা হতে প্রায় দুই ঘন্টার। বাস বা মাইক্রোবাসে করে সহজেই ভালুকার সিডস্টোর তারপর কাচিনা চলে যাওয়া যায়। খাবার দাবারের ব্যবস্থার ব্যপারে কিছু জানা যায়নি, তাই ভালো হয় নিজেদের খাবারের ব্যবস্থা নিজেরাই আগে থেকে করে নিলে। রিসোর্ট বা পিকনিক স্পটের তুলনায় খরচ এখানে কম তা বলাই বাহুল্য।